Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাইক্রোগ্রিন- নিরাপদ এক পুষ্টির আধার

মোহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন

মাইক্রোগ্রিনে পুষ্টি উপাদানগুলো ঘণীভ‚ত অবস্থায় থাকে। ফলে একই পরিমাণে পরিণত সবজি থেকে ভিটামিন, মিনারেল, বিভিন্ন ধরনের পলিফেনল ও এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ মাইক্রোগ্রিনে তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে


মানুষের খাদ্য তালিকায় সালাদ হিসেবে ব্যবহারের জন্য একটি উচ্চমূল্যের ফসল হলো মাইক্রোগ্রিন। এ ফসলগুলো ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর, উচ্চ পুষ্টি মূল্যসম্পন্ন এবং উৎপাদকদের জন্য আয়ের একটি ভালো উৎস। সাধারণত বীজ থেকে কটিলিডন (বীজপত্র) বা কটিলিডনসহ প্রথম পাতা বের হওয়া পর্যায়ের চারাটিকে মাইক্রোগ্রিন বলা হয়ে থাকে। স্প্রাউটের সাথে মাইক্রোগিনের পার্থক্য হলো স্প্রাউটে মূলসহ সমস্ত অংশ ব্যবহার করা হয় আর মাইক্রোগ্রিনে মূল বাদে এর উপরের অংশটুকু ব্যবহার করা হয়।


উদ্ভিদ প্রজাতির ওপর নির্ভর করে একটি মাইক্রোগ্রিন সাধারণত গাছের কাণ্ড, বীজপত্র এবং সে গাছের প্রথম সত্যিকারের পাতা নিয়ে গঠিত। উৎপাদক এবং গ্রাহকের পছন্দের ওপর ভিত্তি করে প্রথম সত্যিকার পাতা বের হওয়ার পরপর অথবা আগেই মাইক্রোগ্রিন সংগ্রহ করা হয়। এ সময় গাছের আকার প্রায় ৫ থেকে ৭.৫ সেন্টিমিটার (২-৩ ইঞ্চি) হয়ে থাকে। পুষ্টি, গন্ধ, রঙ, গঠন এসব বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে মাইক্রোগ্রিন বাছাই বা পছন্দ করা হয়ে থাকে।


মাইক্রোগ্রিন উৎপাদনে সাধারণত রাসায়নিক সার বা কোনো প্রকার বালাইনাশক ব্যবহার করা হয় না। তাই এটি মানবদেহের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। এ ছাড়া মাইক্রোগ্রিন পুষ্টিতে ভরপুর একটি খাবার, যা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয়। জাতের ওপর ভিত্তি করে পুষ্টি উপাদনের সামান্য তারতম্য হয়ে থাকে, তবে বেশির ভাগ মাইক্রোগ্রিনই পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম এবং কপার সমৃদ্ধ। এ ছাড়া এগুলো এন্টিঅক্সিডেন্টের অন্যতম উৎস। মাইক্রোগ্রিনে পুষ্টি উপাদানগুলো ঘণীভ‚ত অবস্থায় থাকে। ফলে একই পরিমাণে পরিণত সবজি থেকে ভিটামিন, মিনারেল, বিভিন্ন ধরনের পলিফেনল ও এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ মাইক্রোগ্রিনে তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।


মাইক্রোগ্রিন শরীরের জন্য অনেক উপকারী। মাইক্রোগ্রিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, ক্যান্সার প্রতিরোধী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়।
অপেক্ষাকৃত কম সময়ে, স্বল্প খরচে এবং অল্পজায়গায় লাভজনকভাবে চাষ করা যায় বলে বিশে^র বিভিন্ন দেশে গত কয়েক বছরে মাইক্রোগ্রিন চাষ যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমাদের দেশেও এর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এটি লাভজনক হবে কি না তা নির্ভর করে এ জাতীয় পণ্য বিক্রির ক্ষমতার ওপর। এ জন্য বাজার ব্যবস্থার ওপর মনোযোগ দিতে হবে। উৎপাদকদেরকে তাদের ফসল বিক্রির নিশ্চয়তার জন্য টার্গেট মার্কেট এবং ভোক্তাদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে হবে।
মাইক্রোগ্রিন হিসেবে অনেক জাতের শস্য আবাদ করা যায়। তবে উৎপাদনের সময় উক্ত জাতটি মানুষের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত এবং নিরাপদ কি না সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে বিশে^ প্রায় ১০০ প্রজাতির গাছ মাইক্রোগ্রিন হিসেবে উৎপাদন ও বিক্রয় করা হচ্ছে।
মাইক্রোগ্রিন একটি স্বল্প জীবনকাল বিশিষ্ট ফসল। তবে বিভিন্ন জাত ও প্রজাতিভেদে বৃদ্ধির হারে পার্থক্য রয়েছে। সবজি জাতীয় মাইক্রোগ্রিনগুলো ৭-১৪ দিনের মধ্যে কর্তন উপযুক্ত হয় কিন্তু হার্বস জাতীয় উদ্ভিদগুলোর ১৬-২৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। উৎপাদন সময়ের ওপর ভিত্তি করে মাইক্রোগ্রিনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
দ্রæত বর্ধনশীল সবজি (৭-১৪ দিন) : বাঁধাকপি, ভুট্টা, শালগম, সরিষা, মুলা প্রভৃতি।
ধীর বর্ধনশীল সবজি (১৫-২৫ দিন) : ডাটা, বিট, গাজর প্রভৃতি।
ধীর বর্ধনশীল হার্ব বা গুল্ম (১৫-৩০ দিন) : তুলসী, মৌরি, ধনিয়া, পার্সলে প্রভৃতি।
প্রচলিত ফসল উৎপাদনের তুলনায় মাইক্রোগ্রিন উৎপাদন পুরোটাই বীজনির্ভর। উৎপাদন ব্যয় ও ব্যবসার লাভ-ক্ষতিনির্ভর করে বীজ ব্যয়ের ওপর। এজন্য একাধিক বিশ^স্ত ও সাশ্রয়ী মূল্যে বীজ সরবরাহকারীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। এতে বীজ সঙ্কট, জাতের সীমাবদ্ধতা, খাদ্য সুরক্ষা এবং সন্ধানের সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস পায়।


বীজের সংমিশ্রণ ও পোকার সমস্যা এড়াতে বীজগুলো নিরাপদ, বদ্ধ পাত্রে সংরক্ষণ করা উচিত। বীজের সজীবতা নিশ্চিত করার জন্য ঠাণ্ডা (১-৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা), শুষ্ক (আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৩-১০%) এবং অন্ধকার স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণাগারে বীজগুলো পুনরায় যাতে আর্দ্রতার সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তানা হলে আগাম অংকুরোদগম হতে পারে এবং বীজের সজীবতা কমে যেতে পারে।


বেশির ভাগ বীজ সাধারণত ৩-৬ শতাংশ আর্দ্রতায় শুকানো হয়ে থাকে। অংকুরোদগম হার বাড়ানোর জন্য কিছু প্রজাতির বীজ পানিতে বা এসিডিক দ্রবণে ভিজিয়ে নেয়ার প্রয়োজন হয়। প্রতিটি প্রজাতির অংকুরোগদমনের জন্য আলাদা আলাদা পরিবেশের প্রয়োজন হয়ে থাকে। সেজন্য প্রজাতির পরিবেশ সম্পর্কে উৎপাদনকারীর যথেষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার। দ্রবীভ‚ত হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মতো দ্রবণগুলো বীজের জীবাণুনাশক হিসেবেও কাজ করে, যা বীজের গায়ে লেগে থাকা জীবাণুু ও ব্যাক্টেরিয়াকে ধ্বংস করে। একইভাবে গরম পানির মাধ্যমেও বীজকে জীবাণুু মুক্ত করা যায়। আবার কিছু বীজ আছে যেগুলো পানি পেলে তার চারদিকে শ্লেষ্মা জাতীয় পদার্থ তৈরি হয়। এ বীজগুলো রোপণের আগে ভেজানো উচিত নয়।


মাইক্রোগ্রিন উৎপাদনের জন্য একজন উৎপাদককে বীজ অঙ্কুরোদগমের প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর দক্ষ হতে হবে। জাতের ওপর ভিত্তি করে উৎপাদনের পরিবেশ বিভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত ১৮-২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৪০-৬০% আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশির ভাগ গাছের চাহিদা মেটাতে পারে।


যেহেতু মাইক্রোগ্রিন সাধারণত ঘরের ভেতরে উৎপাদন করা হয় সেক্ষেত্রে কৃত্রিম আলোক ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে হবে। আলোর উৎস যদি গাছ থেকে বেশি দূরে থাকে তবে চারা লম্বা হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া আলোর তীব্রতা অপর্যাপ্ত হলে চারা ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে। সূর্যের আলোর পরিবর্তে জাতভেদে সাধারণত ১২-১৮ ঘণ্টা কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতে হয়। এক্ষেত্রে ফ্লোরোসেন্ট জাতীয় বাল্ব ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ খরচ অনেক বেড়ে যায়। এর পরিবর্তে এলইডি লাইট ব্যবহার করা যায়। এতে উৎপাদন খরচ অনেক কমে যায়।


মাইক্রোগ্রিন উৎপাদনের জন্য নিয়মিত এবং পরিমিত সেচের প্রয়োজন হয়। অংকুরোদগমের শুরুতে বীজগুলো যাতে স্থানচ্যুত না হয় সেজন্য মিস্টিং নজেল ব্যবহার করে সেচ দিতে হবে যাতে পানি কুয়াশার মতো ছড়ায়। গাছের বৃদ্ধির পর্যায়ের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য শাওয়ার হেড নজেল ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া অতিরিক্ত পানি নিকাশের জন্য উন্নত নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে।


সাধারণত বীজপত্রসহ প্রথম পাতা আসলে মাইক্রোগ্রিন সংগ্রহ করতে হবে। মাইক্রোগ্রিন সংগ্রহের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। উদ্ভিদের আকার খুব ছোট হওয়ায় ফসল সংগ্রহ করা কঠিন, তাই যত্ন সহকারে সংগ্রহের কাজটি করতে হয়। ফসল সংগ্রহের সাথে সাথে মাইক্রোগ্রিনকে শীতল পরিবেশে রাখতে হবে। এতে ফসলের সতেজতা, মান এবং খাদ্যগুণ ভালো থাকে। মাইক্রোগ্রিন সাধারণত কাণ্ডের খুব কাছাকাছি কাটা হয়ে থাকে। সেজন্য ফলন যাতে বীজ বা গ্রোয়িং মিডিয়াম দ্বারা দূষিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফসল কাটার আগে কাটার সরঞ্জামগুলো স্যানিটাইজ করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ফসল কাটার সরঞ্জামগুলো যত সরল হবে সেগুলো যথাযথভাবে স্যানিটাইজ করাও তত সহজ হবে।


বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের সময়োপযোগী বিভিন্ন কৃষি নীতি গ্রহণ এবং তার সঠিক বাস্তবায়নের জন্য দেশ আজ দানাজাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। সরকার এখন নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের প্রতি জোর দিয়েছে। নিরাপদ, পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং লাভজনক ফসল হিসেবে মাইক্রোগ্রিন হতে পারে আগামী বাংলাদেশের এক উৎকৃষ্ট ফসল।

তথ্য অফিসার (কৃষি), কৃষি তথ্য সার্ভিস। মোবাইল : ০১৯১১০১৯৬১০, ই- মেইল : manzur_1980@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon